রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬

গ্রাফিক্স ডিজাইনার কি? কেন? কোথায় চাকরি পাবেন?

 আঁকা ঝোঁকাতে ঝোক বেশি! ক্রিয়েটিভ কিছু করতে মন চায়? সময় পেলেই কম্পিউটারের পেইন্ট টুলস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর নিয়ে গাছ, পাখি, ফুল, ফল, বাড়ির দৃশ্য বা কারো নাম বা ছবি নিয়ে কাজ শুরু করে দেন? পার্ট-টাইম বা ফুল টাইম কাজ খুঁজছেন? অথবা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে অপেক্ষাকৃত বেশি আয় করতে চান? তাহলে ভেবে চিন্তে নেমে পড়–ন গ্রাফিক্স ডিজাইনে। অন্যান্য সব চাকরির থেকে গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশাটি সবচেয়ে নিরাপদ ও ঝামেলা বিহীন। নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন বলার কারণ হলো অন্যান্য সব পেশার বিপরীতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কোনো কাজের অভাব হয় না। এটা একটি সন্মানজনক পেশাও। তবে অনেকেই এ পেশাটি নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কিভাবে এগিয়ে যাবেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কি প্রয়োজন বা একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বেতন-ই বা কতো? তাদের জন্য এ লেখা। লেখাটির মাধ্যমে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চাইলে যে বিষয়টি আগে জানতে হবে সেটি জানানো চেষ্টা করেছি।
গ্রাফিক্স ডিজাইনার কে?
আমরা প্রথমেই জেনে নিই গ্রাফিক্স ডিজাইনার কে বা তার কাজ কি। তার আগে বলি, গ্রাফিক্স ডিজাইন হলো আর্ট বা কলা’র এ মাধ্যম। ডিজাইনার তার কাজের মাধ্যমে এন্ড ইউজার অর্থ্যাৎ সর্বশেষ ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি ভালো প্রভাব ফেলতে পারেন। যেটি সেই ব্যবহারকারীর ব্রেইন এ একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনার হলেন তিনি, যিনি গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী বেশ কিছু কালার, টাইপফেস, ইমেজ এবং অ্যানিমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হন। এটার আউটপুট ডিজিটাল বা প্রিন্ট উভয়ই হতে পারে। আর বর্তমান সময়ে সচরাচর পাওয়া বিভিন্ন টুলস ও লেআউট ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার কাজকে আরো বেশি ক্রিয়েটিভ ও গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে বাড়তি তৃপ্তি দিতে পারছেন
গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে যেখানে চাকরি পাবেন ?
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের দায়িত্ব হলো তার কাজ, পণ্য বা সেবার ওভারঅল লুক ও ভাবমূর্তি ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা। কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া ডিজাইন করা যতোই ভালো পণ্য হোক না কেনো সেটি প্রথমেই ব্যার্থ হবে। তাই একটি নিদ্দিষ্ট পরিকল্পনা ও ক্রিয়েটিভিটি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মানকে উন্নত করে। তাই নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করতে পারলে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের অভাব হয় না! সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সম্প্রতি দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ৩৫ শতাংশ গ্রাফিক্স ডিজাইনার আত্বনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী।
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের ক্ষেত্র কোথায় হতে পারে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো-
→ ইন্টার‌্যাক্টিভ মিডিয়া:
কয়জন গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার কাজের সঠিক মূল্যায়ন ও ভাগ্যকে পরিবর্তন করার যে ক্ষেত্রটি পান সেটি হলো ইন্টার‌্যাক্টিভ মিডিয়া। এখানে বিশেষত টেক্সট, গ্রাফিক্স, ভিডিও, অ্যানিমেশন, অডিওসহ যেকেনো কিছু এবং এ সম্পর্কিত সব কিছুই নিয়ে কাজ হয়। আমার মতে ইন্টার‌্যাক্টিভ মিডিয়া হলো তেমনই একটি ভালো নিশ যেখানে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার কাজকে প্রস্ফুটিত করতে পারেন।
→ প্রমোশনাল ডিসপ্লে:
সাধারণত যারা বড় ধরনের বা বড় আকারের কাজ করতে চান বা কঠোর পরিশ্রম করতে পারবেন তাদের জন্য এটি একটি ভালো মাধ্যম। এ কাজগুলো মূলত বিভিণœ অ্যাডমিডিয়াতে পাওয়া যায়। এখানে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে বিভিন্ন ধরণের বিলবোর্ড ডিজাইন এবং একই ধরণের প্রোমোশনার ডিসপ্লে ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে হয়।
→ জার্নাল:
বিভিন্ন ধরণের জার্নালগুলো (বিষয়ভিত্তিক বা ব্যাঙ্গাত্বক) ক্রিয়েটিভ গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এখানে সাধারণত পাঠককে আকৃষ্ট করার কাজটি করতে হয়। এখানে আপনাকে ছোটখাটো লোগো, ইমোটিকন থেকে শুরু করে কমপ্লিট কাভার ডিজাইন করতে হতে পারে।
→ কর্পোরেট রিপোর্টস:
এটি রেগুলার জব না হলেও কম নয়! একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার বিভিন্ন কোম্পানির কর্পোরেট রিপোর্ট তৈরি করে ভালোমানের আয় করতে পারেন। এটা অনেকটাই প্রফেশনাল কিন্তু মোটেই বোরিং কাজ নয়। কাজের মধ্যে অনেক স্বাচ্ছদ্য বোধ করা যায়।
→ মার্কেটিং ব্রোশিউর:
এটিও অনেকটাই প্রোমোশনাল ডিসপ্লের কাজের মতো। এখানে আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বা সেবা নিয়ে ডিজাইনের কাজটি করতে হবে। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার ছাড়া যেহেতু কাজটি সম্ভব নয়, তাই এখানেও আপনার কাজের ক্ষেত্রটি হতে পারে।
→ সংবাদপত্র:
গ্রাফিক্স ডিজাইনার ছাড়া সংবাদপত্র! মোটেই সম্ভব নয়। একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার একটি সংবাদপত্রকে ঠিকই সংবাদপত্রেরই মতো করে তোলেন। ফাইনাল লেআউট দেওয়ার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার অবশ্যই জরুরী। এখানে আপনার পেশার সন্মানটাও বেশি। তাই সংবাদপত্র একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের জন্য একটি সাফল্যজনক কাজের ক্ষেত্র।
→ ম্যাগাজিন:
এটাও মূলত সংবাদপত্র ও জার্নালের মতো। তবে ম্যাগাজিনে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজের পরিমান অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। কারণ ম্যাগাজিনে ভিজ্যুয়াল লেআউট বেশি থাকে। তাই ম্যাগাজিনের প্রত্যেকটা প্রকাশনার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনার, অবশ্যই আবশ্যক। এটাও আপনার যথোপযুক্ত কাজের ক্ষেত্র হতে পারে।
→ লোগো ডিজাইন:
একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ হলো লোগো ডিজাইন। এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে বেশি সময় লাগে না। আপনার ক্রিয়েটিভিই হলো লোগো ডিজাইনের মূল কথা। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই তার প্রতিষ্ঠানের লোগো তৈরির জন্য একজন ফ্রিল্যান্স লোগো ডিজাইনার অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইনারে খোঁজ করেন। তাই আপনি সহজেই কাজ পাবেন এবং ভালো করতে পারলে তাদেরকেই আপনার রেগুলার বায়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
→ ওয়েবসাইট ডিজাইন:
সবশেষে বললেও একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজের ক্ষেত্র ওয়েবসাইট ডিজাইন। লোকাল মার্কেট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেটাই বলি না কেনো প্রতিনিয়ত ওয়েব ডিজাইনের কাজের পরিমাণ বাড়ছে। তাই ওয়েবসাইট ডিজাইন করেও আপনা গ্রাফিক্স ডিজাইনার পেশাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন নিদ্দিষ্ট লক্ষ্যে।
→ স্মার্টফোন ডিজাইন:
বর্তমান বিশ্বে ডিজাইনিং এর প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। সর্বাধুনিক স্মার্টফোন গুলোতে ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনিং ব্যাবহার করার ফলে হঠাৎ’ করে একটি বড় মার্কেট সৃষ্টি হয়েছে ডিজাইনিং এ। কম্পিউটার প্রফেশনাল অনেকেই কোডিং এর চেয়ে ডিজাইনিংকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন এর জনপ্রিয়তার জন্য। ডিজাইনিং এর আরেকটি প্রধান সুবিধা হল এর মাধ্যমে গ্রাহকের মনের অনুভুতিকে জাগানো সম্ভব হয় যার মাধ্যমে ডিজাইনার সৃষ্টি র আনন্দ পেতে পারেন। বর্তমানে এডোবি ফটোশপ,ইলাস্ট্রেটর, আরও কিছু সফটওয়্যার দ্বারা ডিজাইনিং শেখা যায়। প্রফেসিওনাল মানের ডিজাইনিং একই সাথে আর্থিক সাফল্য ও মানসিক তৃপ্তি দুটোরই ভাল পদ্ধতি হতে পারে।

আউটসোর্সিংয়ের কাজের জন্য কোনটি শিখবেন?

১। এসইও: যে কোন কোম্পানীর জন্য মার্কেটিংটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি কাউকে আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন নাই মনে হয়। মার্কেটিং হচ্ছে ১টা কোম্পানীর জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন বিষয়। অনলাইন মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ এসইও । অর্থাৎ ১টা কোম্পানীর উল্লেখযোগ্য ব্যবসা নির্ভর করে, এসইও এক্সপার্টদের উপর। তাই নিজের ব্যাবসার পাশাপাশি মার্কেটপ্লেস এ কাজ করে প্রচুর আয় করা যায়।
২। গ্রাফিক ডিজাইন: যে কোন কোম্পানীর লোগো, ব্রুশিয়ার থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রিন্টিং জাতীয় সকল প্রোডাক্ট গ্রাফিক ডিজাইনাররা তৈরি করেন। আবার যে কোন ওয়েবডিজাইনের শুরুতে কিংবা ভিডিও অ্যাডিটিংয়ের কাজে কিংবা অ্যানিমিশন প্রজেক্টের ক্ষেত্রেও গ্রাফিক ডিজাইনারদের প্রয়োজন। এমনকি এসইও প্রজেক্টের গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এবার নিজেরেই মনে মনে বের করে নিন, গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য কি পরিমাণ কাজ থাকতে পারে এবং কখনও তাদের কাজের ঘাটতি হবে কিনা।
৩। ওয়েবডিজাইন: ওয়েবডিজাইনারদের সুবিধা হলো, এ সম্পর্কিত কাজগুলো যোগাড় করার জন্য খুব বেশি প্রতিযোগীতাতে পড়তে হয়না। সেজন্য ওয়েবডিজাইনার হলে ক্যারিয়ার গড়ে তোলাটা অপেক্ষাকৃত সহজ। মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ কাজগুলোর প্রতি ঘন্টার রেট ও গ্রাফিকসের কাজের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
৪। ভিডিও এডিটিং : ভিডিও এডিটিং কাজগুলো যেমন মজার, তেমনি কাজটি সহজ আবার আয় করার সুযোগও বেশি। মূলত টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য ভিডিও এডিটিং প্রয়োজন হলেও বর্তমানে ইউটিউবের যুগে ভিডিও এডিটিংয়ের কাজের সেক্টর অনেক বেড়ে গেছে।
৫। অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট : যারা প্রোগ্রামিংয়ে মোটামুটি ধারণা আছে, তাদের জন্য আমার সবসময়ের পরামর্শ থাকে অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট শিখে নিন। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সব সময় এ সেক্টরটির অনেক চাহিদা থাকবে। মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ ধরনের কাজের প্রতিযোগীতা কম থাকে এবং কাজের প্রতি ঘন্টা রেটও অনেক বেশি হয়।
৬| Google AdSense থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন |নির্ভরযোগ্য ব্লগারদের মতে AdSense দ্বারা অনেক টাকা রোজগার করার কৌশল শিখতে পারবেন… AdSense হল সবচাইতে অনলাইন আয়ের সহজ পদ্ধতি। আপনি প্রকৃত Google AdSense এর নিয়ম পদ্ধতি জানতে পারেন…..Google Adsense বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন Google এর একটি Advertising program. ফ্রি ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও Google Adsense ব্যবহার করে উপার্জন করা সম্ভব… Google Adsense যদিও বহুদিন পূর্ব থেকেই সমগ্র বিশ্বে একটি নির্ভরযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদী উপার্জনের পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃত, কিন্তু বাংলাদেশে বিষয়টি অনেকের কাছেই নুতন।

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

মার্কেটপ্লেসে নতুন হিসেবে যেভাবে শুরু করবেন

তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় ঘরে বসে আয় বা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রথাগত চাকরির সময় মেনে অফিসে বসে কাজ করার থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে এই পেশাটি। গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সময়সূচীতে ধরাবাঁধা নিয়ম কিছুটা কম থাকে বলে ফ্রিল্যান্সাররা কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ২০১২ সারের ফ্রিল্যান্স ইন্ডাস্ট্রির তথ্য মতে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারায় ৯০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার সুখী এবং বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হওয়া স্বত্বেও অর্ধেকের বেশি ফ্রিল্যান্সার চিন্তিত নয়। এটা বলা চলে, ৭৭ শতাংশ ফ্রিল্যান্সাররা আগামী এক বছরে তাদের ব্যবসা বা পেশা নিয়ে দারুণ আশাবাদী থাকে। অনেকেই এই সফলতা দেখে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশায় আসতে চান। তবে কেউ কেউ মনে করে মার্কেটপ্লেসে অভিজ্ঞতা না হলে অথবা রেটিং না থাকলে এই পেশায় ভাল করা যায় না। তবে আসল কথা হল মার্কেটপ্লেস নিয়ে অভিজ্ঞ না হয়েও যদি কাজে দক্ষতা থাকে, তাহলে এই পেশায় আসা যায় এবং ইচ্ছা, পরিশ্রম ও ধৈর্য্য থাকলে অনেক ভালো করা যায়। কয়েকটি বিষয় মেনে চললে বা সিদ্ধান্ত নিলে আপনি এই পেশায় ভাল করতে পারেন।

১) লক্ষ্য নির্ধারণ করা

এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন কাজটি করতে চান বা আপনার কোন সেবা বিক্রি করতে চান সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ যে ভুলটি করে, তা হল অন্যরা কি করছে তা অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে আপনার যে অভিজ্ঞতা আছে বা আপনার যে বিষয়টি ভালো লাগে সেটি নির্বাচন করা। আপনি যদি গণিতে ভাল হন, তাহলে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রোগ্রামিং। আর যদি আঁকাআঁকি ভাল লাগে তাহলে আপনার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। যদি লেখালেখি ভাল লাগে তাহলে লেখালেখিতেই ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

২) ভাল একটি ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরি করা

ফ্রিল্যান্সারদের মূল সমস্যা হল তারা তাদের প্রোফাইল সুন্দর করে তৈরি করে না। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সাররা ভাবে কাজের দক্ষতা অর্জনের পরেই প্রোফাইল তৈরি করা যায়। এটা একটি ভুল ধারনা। একজন ফ্রিল্যান্সারের স্কিল অর্জন করার আগে কাজে বিড করা উচিত নয়, তবে,  একজন ফ্রিল্যান্সারের যদি  মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট না থাকে এবং যদি প্রতিনিয়ত কাজের ধারাগুলো না দেখে, তাহলে কখনো জানতে পারবে না মার্কেটপ্লেসে কি কি ধরনের কাজ থাকে। স্কিলের পাশাপাশি মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকতে হবে, কেননা কাজ করার আগে মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী।

৩) মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারনা নেওয়া

নতুন অবস্থায় একজন ফ্রিল্যান্সারের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারনা নাও থাকতে পারে। তবে সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে পূর্ণ ধারনা থাকা আবশ্যক। বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সার এ ধারনা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল সাইট গুলোতে প্রশ্ন করে থাকে। অথচ প্রতিটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে তাদের হেল্প সেন্টার থাকে, যেখানে অনেক সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইল্যান্সের হেল্প সেন্টারে (http://help.elance.com/home)
http://goo.gl/pqnhkK  শতাধিক সাহায্যকারী পোস্ট আছে। একজন ফ্রিল্যান্সারের নিয়মিত এই পোস্টগুলো দেখা উচিত। ভালো ভাবে জানার পরেই মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড করা বা কাজ করা উচিত।

৪) বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা

আমরা একটি কম্পিউটার কিনতে গেলে শুধু একটি কম্পিউটারের কেসিং বা বাক্স কিনি না, এর সাথে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশও কিনি। তেমনি,  যখন কোন ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারকে হায়ার করবে সে একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ চায়। এক্ষেত্রে একটি প্রোফাইল তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, একজন ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কাজটি করার জন্য তার কি যোগ্যতা আছে। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে এবং যোগ্যতা প্রমাণ করতে একজন ফ্রিল্যান্সার দুটি কাজ করতে পারেনঃ

  • স্কিল টেস্টঃ একজন ফ্রিল্যান্সারের স্কিল টেস্টের মাধ্যমে তিনি কি কাজ করতে পারেন সে সম্পর্কে জানা যায়। ইল্যান্সে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্কিল টেস্টের ব্যবস্থা আছে, যেখান থেকে স্কিল টেস্ট দিয়ে আপনার দক্ষতা যাচাই করা খুবই সহজ। এই টেস্টগুলো বিনামূল্যে  দেওয়া যায় এবং কেউ যদি টেস্টে খারাপ করেন তাহলে টেস্টটি হাইড করতে পারবেন এবং পুনরায় টেস্টটি  ১৪ দিন পরে আবার দিতে পারবেন এবং এটাও আবার ফ্রিতেই দিতে পারবেন। যদি ফ্রিল্যান্সার তার প্রোফাইলে ভালো স্কোর দেখাতে পারেন, তাহলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
  • পোর্টফলিওঃ স্কিল টেস্ট প্রমান করে বৈষয়িক জ্ঞান, আর পোর্টফলিও প্রমাণ করে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা এবং হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর উচিত যত বেশি পোর্টফলিও সংযোগ করা। ওয়েব ডেভেলপার তার ডেভেলপ করা সাইটের স্ক্রিনশট নিয়ে আপলোড করতে পারেন, এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনার তার ডিজাইন তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করে দেখাতে পারেন। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো সংযুক্ত করতে পারেন স্কিল হিসেবে। সার্ভিস হোল্ডাররা তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারেন অভিজ্ঞতা হিসেবে। সর্বোপরি কোন প্রোফাইলের পোর্টফলিও একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে তার পরিপূর্ণ দক্ষতা আছে সেটা প্রমাণ করে।

৫) নিজের প্রচারণা চালানো

নিজের ঢোল পেটানো কথাটি খারাপ শোনালেও একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি তেমনটা নয়। আপনাকে যেহেতু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মার্কেটে কাজ করতে হবে তাই আপনার পরিচিতি থাকা আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজের অবস্থান তৈরি করতে আপনার ত্রুটিমুক্ত প্রোফাইল এর পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে হবে। তাই সম্ভব হলে নিজের একটি পোর্টফলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা ভালো। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের প্রোফাইল ও পেজের মাধ্যমে আপনার এবং আপনার বিভিন্ন সেবা তুলে ধরতে পারেন। অবশ্যই প্রফেশনাল ছবি ও তথ্য শেয়ার করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আপনার পার্সোনালিটি নষ্ট হয় এমন কোন কিছু করা উচিত নয়। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করেন তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন।  এতে তাদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এভাবেই আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু করতে পারেন।

সর্বশেষে না বললেই নয়, গুগলকে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বানিয়ে ফেলুন। যেকোনো সফল ফ্রিল্যান্সারকে জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন, প্রত্যেকেই বলবে তারা অনেক কিছু গুগল সার্চ করে জেনেছে। বিষয়টি আসলেই সত্যি। আমরা অনেক সময়ই অনেক ধাপে আটকে যাই, তখনি গুগল সার্চ করুন, দেখবেন প্রচুর রিসোর্স ইতিমধ্যে অনলাইনে আছে যা আপনাকে সাহায্য করবে। প্রোফাইল কমপ্লিট করতে পারছেন না? গুগলে গিয়ে সার্চ দিন, “How to complete Elance profile”। প্রপোজাল লেটার লিখতে সাহায্য দরকার? গুগলে সার্চ দিন, “How to write a perfect Elance proposal”। ফটোশপে কাজ করতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন, গুগলে গিয়ে Photoshop Help অথবা Photoshop Tutorial Video লিখে সার্চ করুন, দেখবেন হাজার হাজার রিসোর্স আছে সাহায্যের জন্য। যেহেতু আমরা মুক্ত-পেশাজীবী হিসেবে নিজেকে গঠন করতে চাচ্ছি, নিজে থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করাটাও আমাদের আয়ত্ত করতে হবে।

এভাবে যদি নিজের ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার শুরু করেন, তাহলে আশা করা যায় খুব কম সময়েই সফলতা পাবেন, এবং সেটি দীর্ঘস্থায়ী হবে।

-
ধন্যবাদ,
কালেকশন ( ইল্যান্স বাংলাদেশ )
http://www.facebook.com/ElanceBangladesh

সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০১৫

আমাদের আরও কিছু সমস্যা - নতুনরা নাকি কাজ পায় না

আমরা অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে ফ্রীল্যান্সিং এর জন্য কাজ শিখেছি। অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কোর্স করে কাজ শিখেছি আবার অনেকে বিভিন্ন বাংলা টিউটোরিয়াল এর মাধ্যমেও কাজ শিখেছি। কিন্তু যারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ফ্রীল্যান্সিং বা অনলাইনে কাজ করার জন্য কাজ শিখে থাকেন তাদের মধ্যে অনেককেই বলতে শুনা যায় যে, আমি তো খালি বিডই করে যাচ্ছি কিন্তু কাজ তো পাচ্ছি না। আবার একই জায়গা থেকে কাজ শিখে কেউ কেউ ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই কাজ পেয়ে যান। আবার নতুনদের মধ্যে অনেকেই কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে বলে থাকেন, এখন আর নতুনরা নাকি কাজ পায় না।
কিন্তু বাস্তবতাটা কি?
নতুনদের মধ্যে কাজ না পাওয়ার হতাশা যতখানি রয়েছে তার থেকে কয়েক গুন বেশি হতাশা দেখা যায় ক্লাইন্টদের মধ্যে। আপনি কাজ না পেয়ে যতটা না বেশি হতাশ তার থেকে অনেক গুণ বেশি হতাশ এই মার্কেটপ্লেস গুলোর ক্লাইন্ট, কারন তারা দক্ষ কর্মী খুজে পায় না। কথাটা হয়ত আজব মনে হবে কিন্তু এটাই বাস্তবতা এবং এর সাক্ষী আমি নিজে। এই কিছুদিন আগেই একটা একটু ব্যতিক্রমধর্মী এক কাজের জন্য ওয়ার্কার খুজতে গিয়ে আমি ৩ বার ফ্রীল্যান্সার.কম এ জব পোস্ট করি, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ১ জন উপযুক্ত লোক ও খুজে পাই নি কাজের জন্য। তাহলে এখন আপনি কিভাবে বলবেন যে, মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পাওয়া যায় না?

তাহলে কি করব?
প্রথেমেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি কতটুকু শিখেছেন? কত দিন ধরে চেস্টা করেছেন? একটু ভাবুন তো, বাস্তব জীবনে ২০-২৫ হাজার টাকার একটা চাকরী করার জন্য আমরা ২০-৩০ বছর বইয়ের বোঝা বহন করে দিন রাত পরিশ্রম করেও শেষমেশ ক্যারিয়ার অনিশ্চয়তায় ভূগি, আর তাহলে ইন্টারনেট থেকে মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আর করার জন্য আপনি কি ৬ মাস কস্ট করতে প্রস্তুত নন? এখন আবার অনেকেই হাসবেন, যে, মাত্র ৬ মাসে ৫০ হাজার টাকা মাসে আয় করব? এইটা কি ছেলে খেলা নাকি, কিন্তু এটাই সত্য। আপনি যদি ৬ মাস ভাল করে পরিশ্রম করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ৬ মাস পরে আপনি মাসে ৫০ হাজার+ আয় করতে পারবেন। তাহলে এবার ভাবুন, আপনি কি নিজেকে ওই রকম দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন?
আমাদের মধ্যে সবচাইতে বেশি যে প্রবণতাটি দেখা যায় সেটি হচ্ছে, অল্প শিখে বেশি আয় করার চিন্তা। আমাদের যারা শিক্ষার্থী রয়েছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আমাদের থেকে টিউটোরিয়াল ডিভিডি কেনার পরে ৫-১০ দিনের মধ্যে আমাদের সম্পূর্ণ ডিভিডি টি দেখে শেষ করে ফেলে এবং ডিভিডি দেখা শেষ হলেই তারা মনে করে থাকে যে, কাজ শিখে ফেলেছি, এবার শুধু বিড করব আর কাজ করব এবং মাস শেষে হাজার হাজার ডলার গুনব। কিন্তু অবশেষে ফল হয় শূন্য। না জানার কারনে ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটে কাজই পায় না। আর তখন, সকল দোষ হয় আমাদের,তখন তারা বলে থাকে, আমাদের ডিভিডি দেখে কিছুই শিখতে পারে নাই, অনলাইনে কাজ করা যায় না, এখানে কাজ পাওয়া যায় না, এটা ভূয়া এই ধরনের আরও অনেক কিছু। তবে আমাদের যারা ফ্রীল্যান্সিং শিখিয়ে থাকি তাদের জন্য এটা সান্তনার যে, এটা শুধু আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, দেশের সকল ফ্রীল্যান্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কপালেই এই ধরনের অপবাদ জোটে।

নতুনদের মধ্যে থাকা আরও একটু ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে,কোন সমস্যা হলে সেটার উত্তর নিজে নিজে না খোজার চেস্টা করা। আমাদের একটি সহজ অভ্যাস রয়েছে, যেখানে আমরা দুর্বল পাই, সেখানেই আঘাত করতে পছন্দ করি। কোন একজন ভাল শিক্ষক পেয়েছি কিনা, কোন ছোট খাট সমস্যা হলেও তার কাছেই জিজ্ঞেস করি। কারন, তিনি তো হেল্প করেন। কিন্তু এমনটা করার কারনেই আমরা কিছু শিখতে পারি না। নিজের সমস্যার সমাধান যদি নিজে বের করার মানসিকতা তৈরি না হয় তাহলে কোন দিনই উপরে উঠা সম্ভব নয়। আর কারন শরণাপন্ন কেবল তখনি হবেন যখন আপনি আপনার সমস্যার সমাধান অনেক চেস্টার পরেও পাবেন না। গুগলকে ব্যবহার করতে শিখুন সমস্যা সমাধানের জন্য, দেখবেন জীবন বদলে যাবে।

এইগুলা গেল অনেক বেসিক লেভেল, এইবার চলুন দেখি যারা বিড করে যাচ্ছেন কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না কেন?
ফ্রীল্যান্স মার্কেটপ্লেসে ঢোকার আগে প্রথম শর্ত হচ্ছে, আপনাকে দক্ষ হতে হবে। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করুন না কেন, সেই সেক্টরে মিনিমাম ৫ টি সফল প্রোজেক্ট সম্পন্ন করেই তবে ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটে কাজ করার চিন্তা করবেন। এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন, নতুন অবস্থায় ৫ টি প্রজেক্ট করার জন্য কাজ পাব কোথায়? এটার ও ব্যবস্থা আছে, আপনি লোকাল কারও কাজ করুন, অথবা নিজে নিজেই কয়েকটি প্রোজেক্ট বানিয়ে সেটাতে কাজ করুন। যেমন ধরুন- আপনি ওয়েব ডিজাইন শিখবেন, তাহলে আগে ৫টি ওয়েব সাইট তৈরি করুন, কারন এই ৫ টি প্রোজেক্ট আপনাকে মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে সাহায্য করবে।

এবার আসা যাক বিড কিভাবে করবেন সেটার উপর?
মার্কেট প্লেসে কাজ পাওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে একটু সাজানো গোছানো ছোট্ট এবং চমৎকার কভার লেটার। কারন, আপনি যখন কোন কাজে বিড করবেন তখন ক্লাইন্ট সর্বপ্রথম আপনার বিডের কভার লেটার টাই দেখবেন। আর তাই কভার লেটার হওয়া উচিত মান সম্মত। এখন, এখানেও আমাদের সমস্যা আছে। আমাকে এই পর্যন্ত অনেকেই ইমেইল এবং ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, কভার লেটার এর নমুনার জন্য। কিন্তু ভাই, আমি আপনাকে বলছি, এই ধরনের মুখস্থ কভার লেটার লিখে কাজ পাবেন না। সেই দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। কভার লেটার অবশ্যই নিজের হাতে লিখবেন এবং কভার লেটারে শুধু তাই লিখবেন যেটা ক্লাইন্ট জানতে চেয়েছেন। কারন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্লাইন্ট তার কাজের সাথে কোন প্রশ্ন যুক্ত করে দেয়, যেমন-

What part of this project most appeal to you?
What question do you have about the project?
What three things do you plan to implement to make the company’s marketing strategy effective?

এই ধরনের প্রশ্ন দেখে অনেকেই ঘাবড়ে যান, ভেবেই পান না কি লিখবেন এর উত্তরে? কিন্তু আপনি কি জানেন, কাজ পাওয়ার জন্য এই প্রশ্ন গুলোই সবচাইতে বড় সহায়ক, এগুলোই হচ্ছে লক্ষভেদের উপায়? এই গুলোর উত্তর যদি সঠিকভাবে দিতে পারেন তাহলে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫% বেড়ে যায়। কারন এই প্রশ্ন গুলোর মাধ্যমে আপনি ক্লাইন্টকে ওই প্রজেক্ট সম্পর্কে আপনার পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেন। আর হ্যা, অবশ্যই অবশ্যই কভার লেটার এবং প্রশ্ন গুলোর উত্তর এমনভাবে দেয়ার চেস্টা করবেন যাতে করে ক্লাইন্ট সেটাতে ইন্টারেস্ট ফিল করে, ক্লাইন্টের মনে যেন এমন ভাবনা আসে যে হ্যা, আপনি কিছু জানেন। আপনাকে দিয়ে কাজটা হবে। যদি ক্লাইন্টের মনে এমন ভাবনা জাগাতে পারেন তাহলেই আপনি সার্থক। সব সময় মাথায় রাখবেন, এমন কাজে বিড করবেন না যেটা আপনি পারেন না, শুধুমাত্র সেই কাজ গুলোতেই বিড করবেন যেটা আপনি পারবেন এবং আপনি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী। আর ক্লাইন্টের সাথে সব সময় ওপেন ভাবে কথা বলুন, এত স্যার স্যার করার কিছুই নেই, এখানে আপনার আর ক্লাইন্টের সম্পর্ক হচ্ছে টাকার সম্পর্ক, সেখানে এত স্যার বলে ডাকার কিছু নেই, আপনি কাজ পারেন ব্যাস করে দিবেন। তাই ক্ল্যাইন্টের সাথে ফ্রেন্ডলী এবং ভাল সম্পর্ক স্থাপনের চেস্টা করুন। শুরুতেই ক্লাইন্টকে বোঝানোর চেস্টা করুন আপনিই তার কাজের জন্য পারফেক্ট এবং আপনি ক্লাইন্টের কাজ সঠিক সময় করে দিতে পারবেন।

আরও একটি সমস্যাঃ
আমাদের আরও একটি সমস্যা হচ্ছে, ধৈর্য্য না থাকা। আমরা মনে করি ২-৩ টা বিড করেই কাজ পেয়ে যাব। কিন্তু আপনি কি নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখেছেন, ক্লাইন্ট যে আপনাকে কাজটি দিবে তার জন্য আপনি নিজে কতটা পারফেক্ট? আমাকে কিছুদিন আগেই এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছি, ভাইয়া আমি ১ মাস ধরে বিড করে যাচ্ছি কিন্তু কাজ পাচ্ছি না। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি কাজ শিখেছেন? উনি বলল, আমি আপনার এসইও ডিভিডি দেখে কাজ শিখেছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি প্র্যাক্টিস করেছেন? তিনি বললেন হ্যা করেছি। আমি বললাম কোন ওয়েবসাইটে প্র্যাক্টিস করেছেন? তিনি বলল, আপনার ভিডিও তো দেখেছি, সেখানের সব ই তো সোজা, আমি সব বুঝেছি, আর ক্লাইন্ট কে দেখানোর জন্য আপনি তো কিছু ওয়ার্কপ্রুফ তৈরি করে দেখিয়েছেন ই, ক্লাইন্ট চাইলে সেটা দিয়ে দিব।

এবার বুঝুন, টিউটোরিয়াল দেখে সব বুঝেছেন আর তাই তিনি প্র্যাক্টিস ও করেন নাই, এমনকি ক্লাইন্ট আগের কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে আমাদের এসইও বাংলা টিউটোরিয়াল এ যে কাজের নমুনা আছে সেটা দিয়ে দিবেন, এমন অবস্থায় উনি নিজেকে ভাবছেন উনি এসইও শিখে গেছেন এবং কাজ করে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করবেন? আপনার কি মনে হয়, ক্লাইন্টরা এতই কি বোকা?

আমাদের আরও কিছু সমস্যাঃ
আমাদের আরও সমস্যা হচ্ছে, শোনা কথায় বিশ্বাস করা কিন্তু নিজে যাচাই না করা। আমরা যার মুখ থেকে যেটা শুনি সেটাই বিশ্বাস করি, কেউ হয়ত বলল যে অনলাইনে অমুক কাজ বিড করলেই পাওয়া যায়, তমুক কাজের ভাত নেই, তমুক কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, এই ধরনের আজে বাজে কথায় আমরা সহজেই বিশ্বাস করি কিন্তু বাস্তবতা যাচাই করি না। এর প্রধান কারন হচ্ছে, আমরা কস্ট করতে পছন্দ করি না, লোকের মুখ থেকে শোনা বিভিন্ন কথার মধ্যে যেটা সবচাইতে সহজ এবং সহজে টাকা কামানো যাবে আমরা সেটাই করতে পছন্দ করি। কিন্তু মনে রাখবেন , সহজ বলতে কোন কথা নেই, আবার কঠিন বলতেও কোন কথা নেই, একটাই কথা- সেটা হচ্ছে পরিশ্রম। পরিশ্রম ছাড়া আপনার বা আমার চেহারাখানি যতই সুন্দর হোক না কেন, কেউ এক টাকাও দিয়ে যাবে না।

আশা করি আজকের কথা গুলো কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন। সব কথা বড় কথা, দুই একবার চেস্টা করে ব্যর্থ হয়ে গেলেন মানে এই নয় যে আপনি পারবেন না। যদি পরিশ্রম করার মানসিকতা না থাকে তাহলে কোন দিনই সফল হতে পারবেন না। পরিশ্রম করলে সবই সম্ভব। আমি ওইটা পারি না, সেইটা বুঝি না, এই সমস্যা, সেই সমস্যা এই গুলা সব ফালতু বিষয়, এই গুলা যতদিন বাদ দিতে না পারবেন ততদিন কিচ্ছু হবে না। কেউই সব কিছু পেরে দুনিয়াতে আসে না, বিল গেটস তার মায়ের পেটে বসে সফটওয়্যার বানানো শেখে নাই, তাকে পরিশ্রম করেই শিখতে হয়েছে, এবং তিনি পেরেছেন বলেই আজ বিশ্বের সেরা ধনী। অনেকেই তো বলে থাকে সৎ পথে ধনী হওয়া যায় না, কিন্তু তাহলে বিল গেটস তো সঠিক পথেই পৃথিবীর সেরা ধনী হলেন কিভাবে? তিনি আর কারো টাকা চুরি করেন নাই, এটা সম্ভব হয়েছে তার পরিশ্রম এর জন্য। আর তাই আপনিও যদি কিছু করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকেও পরিশ্রম করতে হবে। এর বিকল্প কিছুই নেই। যদি কমপক্ষে ৬ মাস নিজেকে পরিশ্রম করানোর মত সাহস এবং সংযম করতে পারেন তাহলেই সফল হতে পারবেন অথবা, দুনিয়া এগিয়ে যাবে কিন্তু আপনি পেছনেই পড়ে থাকবেন আর শুধু ভাববেন অমুক ভাই ফ্রীল্যান্সিং করে মাসে ৫ লাখ টাকা আয় করে কিন্তু আমি পারিনা। এই ভাবনার শেষ কোনদিনই হবে না। টাকার জন্য না শিখে জ্ঞানের জন্য শিখুন, শেখার সময় টাকার কথা ভুলে যান, ৬ মাস পর দেখবেন টাকা আপনার পেছনে দৌড়াবে। শুধু এটা বিশ্বাস করুন- “আমি পারব এবং অবশ্যই পারব”

শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

অনলাইনে কাজ পেতে হলে আপনাকে যা করতে হবে।

ঘরে বসে ইন্টারনেটে আয় বা অনলাইনে কাজ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চাকরির চেয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিয়ে অনেকেই এখন ঝুঁকছেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় হয়েছে। যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ২০০৮ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বেড়েছে। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইল্যান্স, ওডেস্ক ও ফ্রিল্যান্সার। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ পোস্ট করার হারও বেড়েছে।
সম্প্রতি ইল্যান্সের এক জরিপে দেখা গেছে,  স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারায় ৯০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার নিজেকে সুখী মনে করেন এবং বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা হওয়া স্বত্বেও অর্ধেকের বেশি ফ্রিল্যান্সার চিন্তিত নন।
ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে সফলতা দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। অনেকে বলেন, অভিজ্ঞতা না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না। তবে দক্ষ ফ্রিল্যান্সাররা বলেন, অভিজ্ঞতা না থাকলেও  ফ্রিল্যান্সিং করা যায়; এক্ষেত্রে ইচ্ছা, পরিশ্রম ও ধৈর্য থাকতে হয়।
বাংলাদেশে ইল্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান প্রথম আলো ডটকমকে জানিয়েছেন, দেশে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সম্ভাবনা অনেক। নতুন ও আগ্রহীদের জন্য বিশেষ পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
লক্ষ্য নির্ধারণ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কোন কাজটি করতে চান বা আপনার কোন সেবা বিক্রি করতে চান সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে। অধিকাংশ মানুষ যে ভুলটি করে, তা হল অন্যরা কি করছে তা অনুসরণ করা। এ ক্ষেত্রে আপনার যে অভিজ্ঞতা আছে বা আপনার যে বিষয়টি ভালো লাগে সেটি নির্বাচন করা। আপনি যদি গণিতে ভাল হন, তাহলে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রোগ্রামিং। আর যদি আঁঁকাআঁঁকি ভালো লাগে তাহলে আপনার জন্য গ্রাফিকস ডিজাইন সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। যদি লেখালেখি ভালো লাগে তাহলে লেখালেখিতেই ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। লিখতে পারেন ব্লগ, একাধিক ভাষা জানা থাকলে অনুবাদক হিসেবেও কাজ করতে পারেন। যদি ভালো গবেষণা করতে পারেন তবে গবেষক, পরিকল্পনাবিদ থেকে শুরু করে প্রযুক্তি দক্ষতার সব রকম কাজই পাবেন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে। কাজের দক্ষতাই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার চাবি।
ফ্রিল্যান্স প্রোফাইল তৈরি করা
ফ্রিল্যান্সাররা প্রথমেই যে মূল সমস্যায় পড়েন তা হচ্ছে প্রোফাইল তৈরি। সুন্দর একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিজেকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে উপস্থাপন করতে পারলে কাজ পাওয়া সহজ হয়ে যায়। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সাররা ভাবেন যে, কাজের দক্ষতা অর্জনের পরেই কেবল প্রোফাইল তরি করা যায়। এটা একটি ভুল ধারণা। সুন্দর প্রোফাইল আগে তৈরি করা যেতে পারে তবে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা অর্জন করার আগে কাজে বিড করা উচিত নয়। এজন্য আগে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট থেকে কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে।
যাঁরা নতুন তাঁদের অনেকের প্রশ্ন থাকে কোথায়, কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে কাজ শুরুর আগে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কী ধরনের কাজ হয় তা পর্যবেক্ষণ করা। অ্যাকাউন্ট খোলা, সুন্দর প্রোফাইল তৈরি করা। নিজের কাজের স্যাম্পল তৈরি করা। পরীক্ষা দিয়ে নিজের দক্ষতা যাচাই করা। কাজের জন্য ইল্যান্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সারের মতো পরিচিত সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আগে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করুন পাশাপাশি আপনার দক্ষতার কাজগুলোকে সাইটের কাজের বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে অনুশীলন করুন। দক্ষতা না থাকলে শুরুতেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করবেন না। কাজে দক্ষ হয়ে তবে বিড করুন।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য এখন কয়েকটি বিষয় খুব জরুরি। সাবলীল ইংরেজি বলা, লেখা ও ইংরেজি বোঝা। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকাও দরকার। স্কাইপ ব্যবহার জানতে হবে। দ্রুতগতির ইন্টারনেট থাকা সবার আগে দরকার।
প্রোফাইল তৈরির নিয়মকানুন
প্রোফাইল তৈরিতে দক্ষতা ও কাজের বর্ণনা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।  আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী, সেটিকে তুলে ধরতে চেষ্টা করুন। প্রোফাইল সুন্দরভাবে গোছান, শতভাগ প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন। ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে কাজ শুরু করার আগে আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী, সেই বিষয়গুলোতে পরীক্ষা দিন এবং ভালো ফল করতে চেষ্টা করুন। যে বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন, সে বিষয়ে আগে কিছু পড়াশোনা করে তবে পরীক্ষা দিন। আপনার কাজের নমুনা বা স্যাম্পল তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করুন। আপনার নমুনা কাজগুলো বায়ারকে আকৃষ্ট করতে পারে আর আপনাকে কাঙ্ক্ষিত কাজটি এনে দিতে পারে।
প্রোফাইল তৈরির সময় খেয়াল রাখবেন যে, আপনি একজন পেশাদার হিসেবে এখানে কাজ করবেন। আপনার অদক্ষতা যেমন আপনার জন্য বায়ারের কাছ থেকে খারাপ ফিডব্যাক দেবে তেমনি দেশের অন্য ফ্রিল্যান্সারদের সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা দেবে। তাই প্রোফাইলে সব সময় সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত্।
প্রোফাইল তৈরি সম্পূর্ণ হলে  এবং কাজের দক্ষতা নিয়ে আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি কাজ পাওয়ার আবেদন করার জন্য প্রস্তুত।
ইচ্ছা, ধৈর্য আর পরিশ্রম করলে অনলাইনে অভিজ্ঞতা ছাড়া ঘরে বসেই আয় করা সম্ভব। এ বিষয়ে যারা নতুন ও আগ্রহী, তাঁদের জন্য অনলাইনে আয় বিষয়ক এই পরামর্শ দিয়েছেন ইল্যান্সের কান্ট্রি ম্যানেজার সাইদুর মামুন খান।
মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা নেওয়া
নতুন অবস্থায় একজন ফ্রিল্যান্সারের মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা একেবারে না থাকতে পারে। তবে সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা প্রয়োজন। বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সারই এ ধারণা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের গ্রুপে প্রশ্ন করে থাকেন। অথচ, প্রতিটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে তাঁদের হেল্প সেন্টার থাকে, যেখানে অনেক সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। একজন ফ্রিল্যান্সারের নিয়মিত এই পোস্টগুলো দেখা উচিত। ভালোভাবে জানার পরেই মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড করা বা কাজ করা উচিত।
বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা
আমরা যেমন একটি কম্পিউটার কিনতে গেলে শুধু একটি কম্পিউটারের কেসিং বা বক্স কিনি না, এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশও কিনি। তেমনি, যখন কোন ক্লায়েন্ট একজন ফ্রিল্যান্সারকে কাজে নিয়োগ দেন তাঁর কাছ থেকে কাজের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ও দক্ষ পেশাদারিত্বই আশা করেন। এক্ষেত্রে একটি প্রোফাইল তৈরি করাই যথেষ্ট নয়, একজন ফ্রিল্যান্সারকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কাজটি করার জন্য তাঁর কি যোগ্যতা আছে। বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে এবং যোগ্যতা প্রমাণ করতে একজন ফ্রিল্যান্সার দুটি কাজ করতে পারেন-
দক্ষতার পরীক্ষা
একজন ফ্রিল্যান্সারের স্কিল টেস্টের মাধ্যমে তিনি কি কাজ করতে পারেন সে সম্পর্কে জানতে পারেন। ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্কিল টেস্টের ব্যবস্থা আছে, যেখান থেকে স্কিল টেস্ট দিয়ে আপনার দক্ষতা যাচাই করা খুবই সহজ। এই টেস্টগুলো বিনামূল্যে  দেওয়া যায় এবং কেউ যদি টেস্টে খারাপ করেন তাহলে ফলটি লুকিয়ে রাখতেও পারবেন এবং আবার  ১৪ দিন পরে পরীক্ষা দিতে পারবেন। যদি ফ্রিল্যান্সার তাঁর প্রোফাইলে ভালো স্কোর দেখাতে পারেন, তাহলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
পোর্টফোলিও তৈরি
স্কিল টেস্ট প্রমাণ করে বৈষয়িক জ্ঞান, আর পোর্টফোলিও প্রমাণ করে একজন ফ্রিল্যান্সারের দক্ষতা এবং হাতে কলমে কাজ করার অভিজ্ঞতা। একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার এর উচিত যত বেশি পোর্টফোলিও সংযোগ করা। ওয়েব ডেভেলপার তাঁর ডেভেলপ করা সাইটের স্ক্রিন-শট নিয়ে আপলোড করতে পারেন, এবং গ্রাফিকস ডিজাইনার তাঁর ডিজাইন তৈরি করে প্রোফাইলে যুক্ত করে দেখাতে পারেন। বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো সংযুক্ত করতে পারেন স্কিল হিসেবে। সার্ভিস হোল্ডাররা তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে দিতে পারেন অভিজ্ঞতা হিসেবে। সর্বোপরি কোন প্রোফাইলের পোর্টফোলিও একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে তার পরিপূর্ণ দক্ষতা আছে সেটা প্রমাণ করে।
নিজের প্রচারণা চালানো
নিজের ঢোল নিজে পেটানো কথাটি খারাপ শোনালেও একজন ফ্রিল্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে যেহেতু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মার্কেটে কাজ করতে হবে তাই আপনার পরিচিতি থাকা আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজের অবস্থান তৈরি করতে আপনার ত্রুটিমুক্ত প্রোফাইল এর পাশাপাশি নিজেকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরতে হবে। তাই সম্ভব হলে নিজের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা ভালো। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটের প্রোফাইল ও পেজের মাধ্যমে আপনার এবং আপনার বিভিন্ন সেবা তুলে ধরতে পারেন। অবশ্যই প্রফেশনাল ছবি ও তথ্য শেয়ার করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে আপনার পার্সোনালটি নষ্ট হয় এমন কোন কিছু করা উচিত নয়।  অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ প্রয়োজন।  এতে তাদের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
এছাড়াও আপনার দরকার কঠিন মনোবল, কারন অনলাইনে আয় করতে গেলে নানা ধরনের বাধা এবং হতাশা আসতেই পারে, এইগুলো অতিক্রম করতে পারলেই আপনি ইনশা-আল্লাহ্‌ সফল হতে পারবেন।

পোস্টটি দৈনিক প্রথম আলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। 

আপওয়ার্ক থেকে সরাসরি টাকা তুলুন আপনার ডাচ বাংলা ব্যাংক মোবাইল অ্যাকাউন্ট এ কোন ঝামেলা ছাড়াই!

অনেকেই জানেন না যে, ওডেস্ক থেকে ডাচ বাংলা মোবাইল বাংকে উইখড্রো দেওয়া যায়। তাদের জন্য আমার এই পোষ্ট। বিশেষ করে যারা শহর থেকে দূরে আছেন এবং আশে পাশে সকল ব্যাংক সহজলভ্য নয় এবং যাদের আইডি ভেরিফাইড করা হয় নাই, তাদের জন্য আমি মনে করি সর্বাধিক উপযোগী পদ্বতি হল ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা উইথড্রো দেয়া। এছাড়াও এর নানাবিধ সুবিধাও রয়েছে। চলুন তবে শুরু করা যাক।

 *** প্রথমে ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকে একটা একাউন্ট করে নিন। আপনার কলেজের আইডি দিয়েও এই একাউন্ট করতে পারবেন। খরচ পরবে মাত্র ১০০ টাকা । যার মধ্যে আপনি ৪০ টাকা চাইলে তুলে নিতে পারেন একাউন্ট একটিভ হবার সাথে সাথে ই । একটিভ হবে ২ কর্মদিবসের মধ্যেই।

*** এবার ওডেস্কে গিয়ে Wallet থেকে add withdrawal method এ ক্লিক করুন।এখান থেকে Local Fund Transfer এ ক্লিক করুন। Bank SWIFT Code চাইবে। সেখানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সুইফট কোড   DBBLBDDH  দিয়ে Go তে ক্লিক করুন। দেখবেন অটোমেটিকভাবে ডাচ বাংলা বাংকের ঠিকানা শো করতেছে

*** নিচের দিকে আপনার কাঙ্খিত সমস্ত তথ্য দিয়ে সাবমিট করুন। একাউন্ট নাম্বারের স্থানে আপনার ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকের ১২ ডিজিটের নাম্বার টা দিন(আপনার ১১ সংখ্যার মোবাইল নাম্বার + একটা চেক ডিজিট)। ব্রাঞ্চ এবং ব্রাঞ্চ এড্রেস এর জায়গায় আপনি যে উপজেলা  ব্রাঞ্চ এর আওতাধীন ঐ ব্রাঞ্চের নাম ও এড্রেস দিন। পরবর্তী ফিল্ড গুলো পুরন করুন। এবার এড দিস একাউন্ট এ ক্লিক করুন। ব্যাস হয়ে গেল।


তিন দিন সময় নিবে একটিভ হতে। একটিভ হয়ে গেলেই উইখড্রো দিতে পারবেন। টাকা সরাসরি আপনার মোবাইল ব্যাংকের একাউন্টে জমা হবে।

ইন্টারনেটে চাকরি বা ফ্রীল্যান্সিং?

ইন্টারনেটের চাকরিটা অনেকটা আমাদের বাস্তব জীবনের মত হলেও এখানে রয়েছে অনেক সুবিধা। রিয়েল লাইফে চাকরি করতে প্রয়োজন সার্টিফিকেট, কিন্তু ইন্টারনেটে চাকরি করতে গেলে এই সার্টিফিকেটের কোন প্রয়োজন নেই, এখানে দরকার শুধু দক্ষতা। বাস্তব জীবনে যেমন চাকরির একটা গদবাধা সময় থাকে, নিয়ম থাকে, এখানে কিন্তু এমন কিছুই নেই। এখানে আপনি সম্পূর্ণই স্বাধীন বা মুক্ত। আর এই জন্যই এই চাকরিকে বলা হয়ে থাকে ফ্রীল্যান্সিং বা মুক্তপেশা।

তাহলে কোথা থেকে পাবেন চাকরী?

হ্যা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। যেমন ধরুন- প্রথম আলো বা বিভিন্ন পত্রিকায় আলাদা একটি কলাম ই থাকে চাকরির বিজ্ঞাপনের জন্য, যেখানে বিভিন্ন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কোম্পানীতে চাকুরির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়। এবং আমরা পত্রিকায় সেই বিজ্ঞাপন দেখে ওই কোম্পানীর সাথে চাকুরির জন্য যোগাযোগ করি।
অনলাইনের চাকুরির ব্যাপারটাও অনেকটা একই রকম। তবে এখানে, চাকুরীদাতা এবং আপনার মধ্যে একটি সিকিউর বা নিরাপদ যোগসূত্র তৈরি করার জন্য রয়েছে অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস। এই সকল মার্কেটপ্লেস গুলো মূলত হচ্ছে এক একটি ওয়েব সাইট। এই সকল সাইটে মূলত দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। একটি হচ্ছে ফ্রীল্যান্সার বা ওয়ার্কার অ্যাকাউন্ট এবং আরেকটি হচ্ছে বায়ার বা ক্লাইন্ট অ্যাকাউন্ট। একই সাইটে এই দুই ধরনের লোক থাকেন, একদল কাজ দেন এবং একদল কাজ করেন। যারা কাজ দেন তাদের বলে বায়ার বা ক্লাইন্ট, আর যারা কাজ করেন তাদের বলে ওয়ার্কার বা ফ্রীল্যান্সার।
যেমন, এই ধরনের জনপ্রিয় ফ্রীল্যান্সিং ওয়েবসাইট/মার্কেটপ্লেস হচ্ছে- আপওয়ার্ক.কম যার পূর্ব নাম ছিল ওডেস্ক.

আচ্ছা ক্লিয়ার হলেন না? তাহলে একটি উদাহরন দেখুনঃ

ধরুন- একটি অফিসের/কোম্পানীর জন্য একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। এখন, ওই অফিসের মালিক কোথায় খুজবেন এমন একজনকে যিনি তার অফিসের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে দিবেন?
তাই এই ধরনের একজন ওয়ার্কার খুজে পাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন ফ্রীল্যান্সিং সাইটে একজন ওয়েব ডিজাইনার প্রয়োজন লিখে একটি জব পোস্ট করতে পারেন। এখন যেহেতু ওই ক্লাইন্ট একজন ওয়েব ডিজাইনার চাইছেন, তাই আপনার যদি ওই ফ্রীল্যান্সিং সাইটে কোন অ্যাকাউন্ট থেকে থাকে তাহলে আপনি ওই ক্লাইন্টের ওই জবটিতে কাজ করার জন্য আবেদন করতে পারেন। একই ভাবে একটি কাজে আপনার মত আরও অনেক ওয়ার্কার আবেদন করবে। এবং ক্লাইন্ট তখন বিভিন্ন জিনিস যাচাই বাছাই এবং ইন্টারভিউ এর মাধ্যমে আপনাদের মধ্য থেকে একজন বা একের বেশি জনকে কাজটি করতে দিবে।
এবং এই ভাবে আপনি যদি কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করে ক্লাইন্টের কাছে জমা দিতে পারেন তাহলে ক্লাইন্ট আপনাকে পেমেন্ট করে দিবে।

আচ্ছা, সেটা তো বুঝলাম! তাহলে ক্লাইন্ট আমাকে কিভাবে পেমেন্ট করবে? আর আমি টাকাটা পাবই বা কিভাবে?

হ্যা, কাজটি যদি আপনি সফলভাবে করে দিতে পারেন তাহলে ক্লাইন্ট আপানকে সরাসরি পেমেন্ট করবে না। ক্লাইন্ট পেমেন্ট করবে সেই ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যেখানে আপনার সাথে ক্লাইন্টের পরিচয় হয়েছে। মানে, আপনি যেই ওয়েবসাইট থেকে কাজটি পেয়েছিলেন, ক্লাইন্ট সেখানে পেমেন্ট করবে। এবং সেই ওয়েবসাইট আপনার অ্যাকাউন্টে মোট পেমেন্ট থেকে ১০% চার্জ কেটে রেখে দিয়ে বাকি টাকা আপনাকে পরিশোধ করে দিব। এই টাকা প্রথমে আপনার অনলাইন বা ওই ফ্রীল্যান্সিং সাইটের অ্যাকাউন্টে আসবে এবং সেখান থেকে আপনি চাইলে সরাসরি বাংলাদেশী অনলাইন সাপোর্ট করে এমন যে কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন।

অনেকেই তো বলে টাকা তুলতে গেলে নাকি পেপাল, মাস্টারকার্ড ইত্যাদি থাকতে হবে?

এক কথায় আমি বলব, না। ফ্রীল্যান্সিং যে টপ সাইট গুলো আছে সেখান থেকে আপনি সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই টাকা তুলতে পারবেন। এমনকি টাকা আপনার অ্যাকাউন্টে ডলারে আসলেও আপনি ব্যাংকে ট্রান্সফার করার পর সেটি টাকায় কনভার্ট হয়ে যাবে। তাই পেমেন্ট নিয়ে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই।
তবে কিছু সাইট রয়েছে যেখান থেকে টাকা তুলে গেলে একটি মাস্টারকার্ড প্রয়োজন হবে। তবে, মাস্টারকার্ড পাওয়া তেমন কঠিন কিছুই না।
যাই হোক, ওডেস্ক/আপওয়ার্ক, ইল্যান্স, ফ্রীল্যান্সার ইত্যাদি টপ কোয়ালিটি ফ্রীল্যান্সিং সাইট থেকে আপনি সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা তুলতে পারবেন, তাই পেমেন্ট নিয়ে এত চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই।

তাহলে কিভাবে শুরু করবেন?


আশা করি  উপরের লিখা গুলো পড়ে বুঝে গেছেন, যেহেতু এই সেক্টরে কোন ঘুস বা জামানত লাগে না, এবং কাজ শুরু করতে একটাকাও দিতে হয় না কাউকে তাই এখানে আপনার একমাত্র প্রয়োজন হবে ভাল ভাবে কাজ জানা। এখানে যে যত বেশি দক্ষ হতে পারবেন তার আয়ের সম্ভাবনা তত বেশি। ভাল করে কাজ না জানলে এই সেক্টরে কোনদিনই সফল হওয়া যাবে না। আর তাই কাজ শেখা অত্যন্ত জরূরী।